দুই বছর ধরে কৃষকরা ক্ষতি পোষাতে আমন আবাদে মন দিয়েছেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খুলনা জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমন আবাদ হয় উপকূলীয় উপজেলা দাকোপে। সেখানে প্রায় ১৮ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করেন কৃষকরা। কিন্তু গেল দুই বছর ধরে কৃষকরা আমন আবাদ করে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছর আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। মাঠে মাঠে এখন চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আর গেল দু’বছরের আমনের ক্ষতি পোষাতে এবার সেই ঝোঁক আরও বেড়েছে। খুলনায় বোরো ধান এবার কৃষকের গলার ...কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাধারণত আমন ধান চাষের মৌসুম শুরু হয় ১৫ জুন থেকে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে। কিন্তু এ সময় উপকূলীয় ওই উপজেলার আমন আবাদের অধিকাংশ জমিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বেশি থাকায় মাসখানেক দেরিতে আমন ধান চাষ করেন কৃষকরা।

উপজেলার সুতারখালী গ্রামের কৃষক ইয়াসিন মোল্যা বলেন, গেলবার ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এবং পোকার কারণে আমন ধান পাওয়া যায়নি বললেই চলে। বিঘায় ৭ থেকে ৮ মণের বেশি ধান হয়নি। এ বছর ৮ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছি। গত বছরের আগের বছর ধানের দাম না পাওয়ায় দিশেহারা হয়েছিলাম। এ জন্য এবার উঁচু-নিচু সব ধরনের জমিতে চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে সব ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সব গ্রামেই এখন ধানচাষিরা ব্যস্ত। বেশির ভাগ ফসলি জমিতে বীজতলা তৈরি করা শেষ। দু’এক জায়গায় এখনও বীজধান বপণ করছেন। কোথাও আবার ধানের চারা বাড়তে শুরু করেছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে হয়ত ওই চারা বীজতলা থেকে সংগ্রহ করে জমিতে রোপণ করা সম্ভব হবে। এছাড়া বীজতলার চাষিরা বিকেল হলেই সার ও কীটনাশক ছিটানোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন।চকরিয়ায় অনুমোদনহীন দোকানে বিক্রি ...

দলবেঁধে হাতে বালতি, গামলা ও তেলের টিনের তৈরি পানি সেচ যন্ত্র নিয়ে বীজতলায় বর্ষায় জমে থাকা অতিরিক্ত পানি ছেঁচে বীজতলার বাইরে ফেলছেন কৃষকরা।

উপজেলার কয়েকটি গ্রামে অন্তত ২০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাকোপের অধিকাংশ কৃষিজমি এক সময় এক ফসলি ছিল। ১৯৯৫ সালের দিকে রবি মৌসুমে কিছু জমিতে তরমুজের চাষ করা হলেও পরিমাণে তা ছিল খুবই কম। কিন্তু সিডরে এলাকার কৃষক বড় ধাক্কা খান। তারপর আমন আবাদের পাশাপাশি আয় বাড়াতে এলাকায় তরমুজ চাষ করেন চাষিরা। তবে কৃষিপণ্য উৎপাদন থেকে কৃষকের প্রায় ৭০ শতাংশ আয় হয় আমন আবাদে।

Amon

গত বছর এ উপজেলায় প্রায় ১৮ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে আবাদও করা হয়েছিল। কিন্তু সবুজ ধানের বুক চিরে ছড়া বের হওয়ার মুহূর্তে বুলবুল আঘাত হানে ধান খেতে। এতে মাঠের ধান অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। ওই বছর পুরো উপজেলাজুড়ে ৬০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছিল বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, জেলার মধ্যে দাকোপ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আমন আবাদ হয়। বিগত ১০ বছরের মধ্যে ২০১৯ সালে আমন ধানের ফলন বেশ ভালো হয়েছিল। তবে সেবার ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ও পোকার কারণে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েন। ২০১৮ সালে উপজেলায় ১৮ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করে ৭৮ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছিল। গত বছর ২০১৯ সালে ১৮ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছিল। মাঠে ফসল নষ্ট হওয়ার পর ৬০ হাজার মেট্রিক টনের মতো ধান উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর উপজেলায় আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। তবে এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের ধোপাদী গ্রামের কৃষক তপন মণ্ডল বলেন, ২০১৮ সালে ৬ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ করেছিলাম। মাঠে ধানও মোটামুটি ভালো হয়েছিল। কিন্তু সেবার বাজারে ধানের দাম ছিল মণ প্রতি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। সেবার ধান চাষের খরচা তুলতে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। কিন্ত গত বছর ধানের দাম আবার বেড়েছে। সব ক্ষতি পোষাতে এ বছর আবারও বীজতলা তৈরি করে আমন আবাদ করছি।ন-ভূঁইলৈ উভতি চাওঁ

গত দুই বছরের আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ বছর নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন কামারখোলা গ্রামের কৃষক স্বপন কুমার মণ্ডল। তিনি এবার ১১ বিঘা জমির জন্য বীজতলা তৈরি করেছেন। বীজতলার ধানের চারাগুলো সপ্তাহখানেকের মধ্যে সংগ্রহ করে ফসলি জমিতে রোপণ করবেন।

স্বপন জানান, ধানের দর না পাওয়া ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বছর দুটির ক্ষতি এ বছর পুষিয়ে নেয়ার জন্য আবার আমন আবাদ করেছি। লবণাক্ত এই অঞ্চলে একমাত্র আমন আবাদ করে কৃষি থেকে আমরা অধিক রোজগার করতে পারি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমন ধানের ফলন ভালো হবে বলে আশা করেন তিনি।

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান বলেন, উপকূলীয় এ উপজেলার কৃষকদের আমান আবাদে ঝোঁক বেশি। এ অঞ্চলে লবণাক্ততার পরিমাণ একটু বেশি থাকায় অন্য ফসল চাষ করতে চান না চাষিরা। অধিকাংশ কৃষকরা আষাঢ় মাসের মিষ্টি পানিতে ফসলি জমিতে আমন আবাদ করেন। এ বছর বীজতলা তৈরি করেছেন চাষিরা। তবে মাঝে কিছুটা বীজধানের সংকট দেখা দিয়েছিল, পরে তা নিরসন করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর